ঈশ্বর আমাদের দেহ ও আত্মার সাথে দিয়েছেন একটি মন। এই মন দিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করতে পারি। যা চিন্তা করি তা অনুভব করি এবং যা অনুভব করি তা-ই আমরা কাজে পরিণত করি। মন থেকে আমরা পাই মানসিক শক্তি। মনীষীগণ বলেছেন, মানুষের মন অনেক শক্তিশালী। মন থেকে আসে ইচ্ছাশক্তি। মনের জোর বা শক্তিকে বলা হয় মনোবল। এই মনোবল হলো মানুষের একটি প্রধান চালিকাশক্তি। এটি পবিত্র আত্মার একটি বিশেষ দান। তাই মনের সুস্থতা ও পবিত্রতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি শারীরিক সুস্থতা বা অসুস্থতাও নির্ভর করে মানুষের মনের সুস্থতা বা অসুস্থতার ওপর। অন্যদিকে আবার দেহের সুস্থতা বা অসুস্থতা মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দেহ ভালো থাকলে প্রায়ই দেখা যায় মনটাও ভালো। আবার দেহ অসুস্থ হলে অনেক সময় মনটাও খারাপ হয়ে যায়। তাই মানুষ বলে থাকে- সুস্থ দেহে সুস্থ মন। মনের পরিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার ওপর মানুষের আত্মার সুস্থতা নির্ভর করে। মনের কারণে আমি আমার অপরাধ বুঝতে পারি। অপরাধ আত্মার ক্ষতি করে। মন যদি বলে যে আমি অপরাধ করেছি তবে তা আত্মায় প্রবেশ করে। এ কারণে মনের প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে মানুষ তার গোটা ব্যক্তিত্ব বা মানুষটিকেই প্রকাশ করে থাকে। মনের সুস্থতা ও স্বাভাবিকতার ওপর একজন মানুষের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন নির্ভর করে। এই সকল কারণেই মনের গুরুত্ব অনেক।
এমনকি শারীরিক সুস্থতার চেয়েও মনের বা মানসিক সুস্থতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হলেও স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু একজন মানুষ যখন মনের দিক বা মানসিকভাবে অসুস্থ হয় তখন স্বাভাবিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। মন হলো আমাদের চালিকাশক্তি। মনের শক্তি হলো বুদ্ধি ও ইচ্ছাশক্তি। বুদ্ধি দিয়ে আমরা যুক্তিসংগত চিন্তা করতে পারি। ইচ্ছাশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের জীবন। ইচ্ছাশক্তি থেকে জন্ম নেয় মানুষের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা থেকে আসে ভালো বা মন্দ বোঝার ক্ষমতা বা বিচারবোধ। চিন্তাশক্তি সঠিক থাকলে মানুষের অন্য সব কাজ সঠিকভাবে সুসম্পন্ন হয়। বর্তমানে বৈজ্ঞানিকভাবে মন নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন উপায় নির্ধারণ করা হচ্ছে।
আমাদের বিশ্বাসের জীবনেও মনের গুরুত্ব ও প্রভাব অনেক। বিশ্বাস ও মন পরস্পর সম্পর্কিত। বিশ্বাসপূর্ণ আচরণ ও কাজসমূহ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় মন দ্বারা। আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ় মনোবলের কারণেই বিশ্বাসের জন্য সাধু-সাধ্বীরা জীবন দিতে পেরেছিলেন। নানারকম কষ্টভোগ ও নির্যাতন সহ্য করতে পেরেছিলেন।
আবার অনেক সময় আমরা লক্ষ করি যে, শারীরিকভাবে অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী হলেও মনের দৃঢ়তা ও উচ্চতর চিন্তা শক্তির কারণে মানুষ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আমরা বৈজ্ঞানিক স্টিফেন হকিন্স ও হেলেন কেলারের নাম এখানে স্মরণ করতে পারি। তাঁরা শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তাঁদের দৃঢ় মনোবল ছিল। এ কারণে তাঁরা মানবজাতির জন্য স্মরণীয় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আবার অনেক সময় আমরা লক্ষ করে থাকি যে মানুষের শারীরিক সুস্থতাও মনের সুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত। মন সুস্থ ও ভালো না থাকলে মানুষ অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও মানসিক রোগ হয়ে থাকে। মন ভালো না থাকলে অন্য কোনো কিছু করতেও ভালো লাগে না। মনকে সঠিকভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সব কাজ সুন্দর ও সঠিকভাবে হয়। এ কারণে বড়রা সবসময় তোমাদের বলে থাকেন মন দাও, মনোযোগী হও, সব কাজে মনোনিবেশ কর।
মনের কাজ
মনের গুরুত্ব আমরা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছি। এবার আমরা দেখব মনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
১। মন হলো আধ্যাত্মিক জীবনের শক্তি। এই শক্তিকে আমরা বলে থাকি অন্তর্দৃষ্টি, যার মধ্য দিয়ে আমরা বিচার বিবেচনা করতে পারি।
২। মন গোটা মানুষটিকে চালায় ও নিয়ন্ত্রণ করে।
৩। মন চিন্তা করতে ও কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
৪। মন কোনো বিষয়ের যুক্তিসংগত বিশ্লেষণে সাহায্য করে।
৫। মনের একাগ্রতা কোনো বিষয়ে সাফল্য অর্জনে সাহায্য করে।
মন ভালো রাখার উপায়
অনেক সময় খুব সহজেই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। মনের গুরুত্বের কারণেই আমাদের মন ভালো রাখতে হবে। সেইজন্য আমাদের জানা দরকার কীভাবে মন ভালো রাখা যায়। নিচে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো:
১। সব বিষয়ে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখা;
২। আত্মবিশ্বাস রাখা;
৩। ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা ও অপশক্তির দ্বারা প্রভাবিত না-হওয়া;
৪। ভালো চিন্তা ও ভালো কাজ করা;
৫। মূল্যবোধ নিয়ে সৎ জীবনযাপন করা ও নৈতিক জীবন ঠিক রাখা;
৬। সবার সাথে সম্ভাব বা সুসম্পর্ক বজায় রাখা;
৭। সামাজিকতা রক্ষা করা, আনন্দ নিয়ে উৎসব পালন করা;
৮। নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও পরিবেশ সুন্দর রাখা;
৯। ভালো মানুষের সাহচর্য ও সান্নিধ্যে থাকা;
১০। সঠিক ও সৎ মানুষের পরিচালনা গ্রহণ করা।
এছাড়া আরও অনেক বিষয় আছে যা আমরা নিজেরাও চিন্তা করলে বুঝতে পারি। তবে আমাদের মন ভালো রাখার দায়িত্ব নিজেদেরই।
কাজ: তোমার মন খারাপ হলে তুমি কী করো এবং মন ভালো হওয়ার জন্য কী করতে পার তা লিখ ও দলে সহভাগিতা করো। |
Read more